সালেহ্ বিপ্লব: [৩] নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে নিয়ম রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। এই বাজেটে আমরা কোথাও কোনো স্বস্তি দেখি না। 

[৪] তিনি বলেন, চলমান সময়ে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সুরক্ষা দিতে হয়। বিভিন্ন খাতে দেখা গেছে প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। 

[৫] এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি এবং আসক্ত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

[৬] তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজেটে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে। ৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়েছে সেখানে বর্তমান শাসক দল যে ইশতেহার দিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে তারা ইশতিহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। বর্তমান সরকারের যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটের কৌশল এবং বরাদ্দের মিল নেই।

[৭] তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা প্রস্তাবিত বাজেটে মেলানো হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব নীতি ও অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে বাজেটের বরাদ্দ মিলে না। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় দেখলে বোঝা যায় সাধারণ মানুষের নয় ব্যক্তি বিশেষের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

[৮] সোমবার দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ?‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি তার এ মূল্যায়ন তুলে ধরেন। এর আগে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

[৯] মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড়ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রোক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ করের ছাড় ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা নেই। আয়করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

[১০] তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বলা হয়েছে ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয় ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এটা মানা যায় না।

[১১] ব্রিফিংয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী, ফাঁকাবুলির বাজেট। পাশাপাশি এটি বৈষম্যমূলক বাজেট, সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থহীন বাজেট এটি।

[১২] ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এটি এমন একটি বাজেট, যা জবাবদিহিতাহীন। এটি দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিক বাজেট। কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না এমন ঘোষণা কিন্তু আমাদের আছে। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেবেন, অন্যজন অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতি করে প্রচুর পরিমাণে আয় করে নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। আবার এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না।

[১৩] তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সারা বছর অবৈধভাবে আয় করার। এর মাধ্যমে দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে তোমরা চাইলে এই পথটা অনুসরণ করো। এসবের কারণে আমরা আগামী প্রজন্মকে বলার সাহস পাব না যে তোমরা ভালো আদর্শ অনুসরণ করো। এই বলার সাহসটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নৈতিকতার যে ভিত্তি তা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী